স্কুল পাঠ্যবইয়ে তথ্য বিকৃতি, বানান ভুল, লেখা পরিবর্তন, পরিমার্জন ইত্যাদি নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা নতুন কিছু নয়। এসব কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। পাঠ্যবইয়ে তথ্য বিকৃতি ও বাক্য গঠনের ভুলগুলো শুধু অদক্ষতাই নয়, এটি অমার্জনীয় অপরাধ। জানা গেছে, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির দুটি বই প্রত্যাহার করা হয়েছে। আরো দুই-তিনটি বই সংশোধনের কথা ভাবা হচ্ছে। নতুন শিক্ষাক্রমে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ এবং ‘বিজ্ঞান’ বিষয়ে দুটি করে বই আছে। এর এক অংশের নাম ‘অনুশীলন বই’ ও অপর অংশের নাম ‘অনুসন্ধানী পাঠ’। এর মধ্যে দুটি শ্রেণিতেই ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ বই দুটি আর পড়ানো হবে না। যে দুটি বই প্রত্যাহার করা হয়েছে, তার মধ্যে ষষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ বইয়ের ২১ ও ২৪ নম্বর পৃষ্ঠায় আলোচিত ‘বিবর্তনবাদ’ অংশ নিয়ে বিতর্ক ওঠে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমে। প্রণীত পাঠ্যবই প্রত্যাহারের মতো পরিস্থিতি তৈরি হওয়া স্বস্তিদায়ক নয়। একটি বই পড়তে শুরু করার পর সেটি বাদ দেয়ায় বিভ্রান্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। দায়িত্বপ্রাপ্তরা এই গাফিলতির দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবই নিয়ে এই দোলাচল মোটেও কাম্য নয়। নতুন শিক্ষাক্রমে ছাপানো পাঠ্যপুস্তকে ভুল হলো কেন? শিক্ষাক্রমের ভুল-ভ্রান্তির জন্য এনসিটিবির কোন কোন কর্মকর্তা জড়িত তাদের খুঁজে বের করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের সরকারের সময় একই ধরনের ঘটনা গ্রহণযোগ্য নয়। এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিক্ষার মেরুদণ্ড ধ্বংসের ষড়যন্ত্র। এর আগেও স্কুল পাঠ্যবইতে ভুলের ছড়াছড়ি হয়েছে। কৌশলে হয়েছে তথ্য বিকৃতি। বিভিন্ন সময়ে সংবাদপত্রে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে কোনো জোরালো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। পঁচাত্তরের পটপরিবর্তনের পর থেকেই শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধের গণতান্ত্রিক অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিপরীতে দেশের যাত্রা। রাজনীতি থেকে শুরু করে শিক্ষা, সংস্কৃতি সর্বক্ষেত্রেই এই পরিবর্তন আনার চেষ্টা হয়। পাঠ্যবইয়ে সাম্প্রদায়িক চিন্তা ও বিকৃত ইতিহাসের অনুপ্রবেশের মাধ্যমে শিশু-কিশোরদের মগজ ধোলাই চলে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে পাঠ্যবইয়ে যে পরিবর্তন করে সেই পরিবর্তন এই খাতে স্মরণকালের মধ্যে বড় সংস্কার হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। এ সময় পাঠ্যবইয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পাশাপাশি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ তুলে ধরা হয়। কিন্তু আমরা দেখছি, ইতিবাচক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে প্রতি বছর কোনো না কোনো বইতে ভুল ও বিকৃতি দেখা যায়। এর দায় কার? এনসিটিবির দায়িত্ব কী? নানা প্রশ্ন সামনে আসছে। আমাদের সন্তানদের প্রকৃত ইতিহাস ও সঠিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। পাঠ্যবই বিকৃতি ও ভুলের নেপথ্যে যারা যুক্ত তাদের আইনের আওতায় আনতেই হবে। পাঠ্যবইয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ভুল-ভ্রান্তি ও বিকৃতি যেন কোনোভাবেই আর না থাকে সে বিষয়ে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের সর্বোচ্চ সচেতনতা আমরা আশা করি।